ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত যে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নারীদেরকে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। মুসলিম-সমাজকে পাশ্চাত্যকরণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইউরোপীয়ানরা উপনিবেশ আমলে নারী সম্পর্কে পশ্চিমা ধারণা মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। আর সেই লক্ষ্যে তারা মুসলিমদের ভেতর থেকেই একদল লোক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল, যাদেরকে সংস্কারবাদী হিসেবে ডাকা হতো। বর্তমানে যাদেরকে আমরা মডারেট হিসেবে চিনি।
বর্তমান সময়েও নারী-স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী-অধিকারের মতো চটকদার স্লোগানগুলো সাম্রাজ্যবাদীদের দখলদারিত্বের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব এই স্লোগানগুলোর আড়ালে মূলত মুসলিম বিশ্বের রাজনীতি ও বিধানপ্রণালীতে হস্তক্ষেপ করছে এবং মুসলিমদের উপর পশ্চিমা মতাদর্শ চাপিয়ে দিচ্ছে। এই কারণেই দেখা যায়, আমেরিকার প্রসিদ্ধ থিঙ্কট্যাঙ্কার ও পলিসিমেকার প্রতিষ্ঠান র্যান্ড কর্পোরেশনের রিপোর্টসমূহে নারীর পশ্চিমায়ন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে। এমনকি তারা নারী-অধিকারের ইস্যুকে মুসলিম বিশ্বের সাথে চিন্তাযুদ্ধের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। সাথে সাথে নারী-অধিকারের পশ্চিমা কন্সেপ্ট মেনে না নেওয়াকে তারা উগ্রবাদীদের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এজন্যই দেখা যায়, যেসব স্থানেই মুসলিমরা আল্লাহর শরিয়াত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে, সেখানেই তারা নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নকে ইসলামি শরিয়ার বিরোধিতা করার জন্য প্রধান নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রায় আন্তর্জাতিক প্রতিটি সংস্থা আজ নারীর প্রতি ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে এক প্রকাশ্য যুদ্ধে লিপ্ত। এই যুদ্ধে তারা মুসলিম নারীদেরকে ইসলামের প্রতিষ্ঠিত কিছু মূল্যবোধের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে। যার প্রভাব বর্তমান পুরো মুসলিম-সমাজের ওপর দৃশ্যমান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম-সমাজ মনস্তাত্ত্বিক এই লড়াই সম্পর্কে পরিপূর্ণ উদাসীন হয়ে আছে। তারা আজ নিজেদের অজান্তেই ইসলামের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে ইউরোপের দাসত্ব বরণ করে নিচ্ছে।
মুসলিম নারীদের ওপর পশ্চিমা সভ্যতার এই নির্মম শোষণ, তার প্রক্রিয়া, প্রভাব ও প্রতিকারসহ পুরো একটি প্যাকেজ এই বইটি। যা সচেতন ও অসেচতন প্রতিটি মুসলিম নারীপুরুষের জন্য জানা ও অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। নারী-অধিকার, নারীর কর্ম, নারী-নেতৃত্ব, হিজাব, জন্মনিয়িন্ত্রণ, ফ্রি-মিক্সিং ইত্যাদি বিষয়ে র্যান্ড কর্পোরেশনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম ও প্রস্তাবনার পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে ইসলামি শরিয়া ও বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে। আলোচনা হয়েছে এর প্রতিকারে আমাদের করণীয় ও দায়িত্ব নিয়ে।এক কথায়, পশ্চিমা নারীবাদী প্রজেক্টের স্বরূপ প্রকাশ ও তার প্রতিকার নিয়ে বাংলা ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন হবে এই বইটি ইনশাআল্লাহ।
Add your review
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Please login to write review!
Looks like there are no reviews yet.