যুবতিদের উদ্দেশে আমার আহ্বানে আশ্চর্য হয়ো না। কেননা:
১. আজকের তরুণী-যুবতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিপালনকারী মা।
২. ইসলামবিরোধী শক্তি দাবি করছে নারীরা অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত। তাদের অনেকে নারীদের নিয়ে কথা বলে। সাহিত্যিকরা কবিতা ও গদ্য রচনা করে। সাংবাদিকরা কলম চালিয়ে যায়। প্রত্যেকে নারীদের নিয়ে কথা বলছে। নিজেদের এমনভাবে তুলে ধরছে, যেন তারা সত্যিই নারীদের নিয়ে চিন্তিত-উদ্বিগ্ন!
৩. আমার এ কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে স্বয়ং নবিজি সা. নারীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, তাদেরকে বিশেষ তত্ত্বাবধানের প্রক্রিয়ায় রাখতেন। প্রত্যেক ইদের সময় পুরুষদের প্রতি খুতবা দেওয়ার পর নারীদের সমাবেশেও খুতবা রাখতেন। নারীদের জন্য এ বিশেষ আয়োজন তাদেরকে আরও বেশি প্রফুল্ল করত। একবার এক নারী এসে রাসুল সা.-কে বললেন, ‘পুরুষরা আপনার কাছে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলার সুযোগ পায় বেশি, আমাদের জন্য একটা দিন নির্ধারণ করে দিন।…’ নবিজি সা. একটা দিন নির্ধারণ করে দিলেন, সেদিন তিনি পুরুষদের বিষয় বাদ দিয়ে বিশেষ করে নারীদের উদ্দেশে কথা বলতেন। (সহিহুল বুখারি : ৭৩১০।)
তা ছাড়া বিদায় হজের দিন নবিজি সা. নারীদের বিষয়ে বলেছেন :
اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ،
‘নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কারণ, তাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ।’ (সুনানু আবি দাউদ : ১৯০৫, সুনানু ইবনি মাজাহ : ৩০৭৪।)
আবার স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ করাকে একজন উত্তম পুরুষ হওয়ার মাপকাঠি হিসেবে পরিণগণিত করেছেন রাসুল সা.। তিনি বলেন :
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي
‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।’ (সুনানুত তিরমিজি : ৩৮৯৫)
কেবল এতটুকুই নয়; বরং নবিজি সা. একটি সেনাবাহিনীকে অপেক্ষায় রেখেছেন তাঁর স্ত্রী আয়িশা রা.-এর হার হারিয়ে যাওয়ার সময়ে। তখন আবু বকর রা. আয়িশার কাছে এসে তাঁকে তিরস্কার করে বললেন, ‘তুমি আল্লাহর রাসুলকে বাধ্য করেছ মানুষদেরকে অপেক্ষা করাতে। মানুষের সাথে পানি নেই, তারা বিনা পানিতে কষ্ট পাচ্ছে।’
যখন উট উঠে গেল, তখন তার নিচে হারটি পাওয়া গেল। সে সময় তায়াম্মুমের আয়াত নাজিল হলো। উসাইদ বিন হুসাইন রা. বলেন, ‘আবু বকরের পরিবার, এটা আপনাদের প্রথম বরকত নয়, এমন বহু বরকত আমরা আপনাদের মাধ্যমে পেয়েছি।’
নারীদের মর্যাদা নবিজি সা.-এর কাছে এতটা উচ্চ ছিল যে, একবার উম্মে হানি রা. আসলেন নবিজি সা.-এর কাছে। বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমার মায়ের ছেলে আলি বলছে, সে ওই লোককে হত্যা করবে, যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি!’
নবিজি সা. বললেন, (قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أُمَّ هَانِئٍ) ‘উম্মে হানি, তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম।’ (সহিহুল বুখারি : ৩৫৭ )
৪. কারণ নারীরাই নেককারদের জন্ম দিয়েছে, আলিমদের জন্মদাত্রী তো তারাই। নারীদের কেউই তো শাফিয়ি রহ.-কে জন্ম দিয়েছে; তাদের কেউই তো উমর বিন আব্দুল আজিজের জন্মদাত্রী; ইবনে তাইমিয়া, আবু হানিফা, মালিক, আহমাদের মতো আলিমদের জন্মদাত্রী তো নারীরাই।…
তাই ভুলে যেও না, সে সকল বড় আলিমসহ প্রত্যেকেরই ছিল একজন নেককার মা। যিনি আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন; আল্লাহ যেন তার সন্তানকে তার চক্ষু শীতলকারী বানিয়ে দেন। আর সে সকল বড় আলিমের মধ্যে প্রত্যেকেরই ছিল জীবনসঙ্গিনী, যার কাছে গিয়ে তিনি শান্তি ও সুস্থিরতা পেতেন।
এরপরও কি যুবতিদের প্রতি আমার এ সম্বোধন যথাযথ নয়?!
Add your review
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Please login to write review!
Looks like there are no reviews yet.